কসবা উপজেলা
কসবা | |
---|---|
উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৪′১৬″ উত্তর ৯১°৯′৪৮″ পূর্ব / ২৩.৭৩৭৭৮° উত্তর ৯১.১৬৩৩৩° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ২০৯.৭৬ বর্গকিমি (৮০.৯৯ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ৩,১৯,২২১ |
• জনঘনত্ব | ১,৫০০/বর্গকিমি (৩,৯০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৭৫% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ১২ ৬৩ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
কসবা উপজেলা বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা এবং উপজেলা।[২]
অবস্থান ও আয়তন
কসবা উপজেলার আয়তন ২০৯.৭৬ বর্গ কিলোমিটার। এ উপজেলার উত্তর-পূর্বে আখাউড়া উপজেলা, উত্তরে তিতাস নদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা, উত্তর-পশ্চিমে নবীনগর উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা এবং দক্ষিণে ও পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।
ইতিহাস
কসবা একটি ফরাসি শব্দ । কসবা শব্দটির আভিধানিক অর্থ জনপদ অথবা উপশহর।ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনামলে এ নামকরণ করা হয়।অনেক ঐতিহাসিকের মতে কসবার আদি নাম ছিল কৈলাগড়।কিল্লা শব্দের অর্থ সেনানিবাস যা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে কৈলা।গড় অর্থ দুর্গ।মুসলমানদের শাসনামলে এ কসবা ছিল একটি কিল্লা বা সেনানিবাস।আর এভাবেই কৈলাগড় থেকে কসবার উৎপত্তি।ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনামলে ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে কৈলাগড় নামে একটি দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। ঐ দূর্গের আশে পাশে প্রথম দিকে জনবসতি এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে ছোট শহর কসবা গড়ে ওঠে। ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাস গ্রন্থ "রাজমালা"থেকে জানা গেছে কোন এক সময়ে এই কসবা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী ছিল। কসবা ছিল সুলতানি আমলের উপবিভাগীয় প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রশাসনিক উপ-বিভাগগুলোর মধ্যে ইকলিম, ইকতা, মুকতা, ইরতা, সোয়ার,ও কসবা নামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ৩৭টি কসবার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কসবাগুলির অধিকাংশই বর্তমান জেলা শহরের মধ্যে বা অদুরে অবস্থিত ছিল। একটি কসবার অবস্থান থেকে অন্যটির দূরত্ব ও একটি বিষয়। এসব নামের সঙ্গে অনেক রাজকীয় আমলার পদবির সংযুক্তি লক্ষ করা যায়, যেমনঃ কাজূর কসবা, কতোয়ালের কসবা, শহর কসবা, নগর কসবা ইত্যাদি। কসবাগুলোর অবস্থান, একটির সঙ্গে অপরটির দূরত্ব, রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রাদেশিক রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা এবং নামের সঙ্গে যুক্ত রাজকীয় পদবি ও অন্যান্য বিষয় বিচেনা করে কসবাকে সুলতানি আমলের একটি উপ-বিভাগীয় প্রশাসন কেন্দ্র বলা যেতে পারে। সুলতানি আমলের ‘কসবা’ কে জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কসবার দায়িত্বে ছিলেন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, একজন কাজি ও একজন কতোয়ালী। মূঘল আমলের অধিকাংশ কসবাই পূর্বের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
ভৌগোলিক পরিবেশ
বাংলাদেশের প্রায় সকল ভৌগোলিক উপাদান ও বৈশিষ্ট্য এখানে পরিলক্ষিত হয়। বিস্তীর্ণ সমভূমি, নিচু ভূমি, জলাশয়, উচ্চ ও অনুচ্চ পাহাড়, লাল মাটির পাহাড়, নদী-নালা, খাল বিল পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলা ভূমি। সমগ্র কসবা ছিল নূরনগর পরগনার অন্তর্ভূক্ত। তিতাস, সালদা, বিজনা, সিনাই, সাঙ্গুর, বুড়ি,রাজার খাল,অদের খাল, কালিয়ারা নদী একে বেকে কসবার মধ্যে অতিক্রম করে গেছে। এ উপজেলার পূর্বপ্রান্তে রয়েছে লাল মাটির পাহাড়ী টিলা ভূমি। ছোট ছোট টিলার সবুজ বনানী আর পশ্চিম প্রান্তে সমতল ভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক ঐতিহ্যবাহী স্থান কসবা উপজেলা যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, সবুজ গাছপালায় ঢাকা গ্রাম, পাহাড়ী টিলার সবুজ বনানী কসবার প্রকৃতিকে করে তুলেছে অপরুপ। আদি বসতির বিভিন্ন নিদর্শন, ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে গড়ে উঠেছে আজকের কসবা উপজেলা।
প্রশাসনিক এলাকা
কসবা উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম কসবা থানার আওতাধীন।
- ১নং মূলগ্রাম
- ২নং মেহারী
- ৩নং বাদৈর
- ৪নং খাড়েরা
- ৫নং বিনাউটি
- ৬নং গোপীনাথপুর
- ৭নং কসবা পশ্চিম
- ৮নং কুটি
- ৯নং কায়েমপুর
- ১০নং বায়েক
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এখানকার মোট লোকসংখ্যা ৩,১৯,২২১ জন।
জলবায়ু
ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর অন্তর্গত । এ উপজেলায় গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত এই তিনটি ঋতুর প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মে মাসে ৩০ ডিঃসেঃ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ডিঃসেঃ পরিলক্ষিত হয়। জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ ও স্বাস্থ্যকর। বার্ষিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১১৪.৬৫ ইঞ্চি এবং সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত ৫৬.৪৩ ইঞ্চি এবং গড় বৃষ্টিপাত ৭৮.০৬ ইঞ্চি।
দর্শনীয় স্থান
- কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ- শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সমাধিস্থল।
- লক্ষীপুর(গোপীনাথপুর) শহীদ মুক্তি যোদ্ধা সমাধিস্থল।
- বাংলাদেশের প্রথম ও এক মাত্র কোরআন ভাস্কর্য। কসবা।
- পুড়া রাজার জাঙ্গাল- তিন লাখ পীর (তিলক পীর) থেকে বল্লভপুর পর্যন্ত; পাঁচ শত বছরের পুরনো।
- নির্মলা সুন্দরী -শ্রী শ্রী আনন্দময়ী আশ্রম ও জন্ম ভিটা।খেওড়া।
- রাজা ধর্ম মানিক্যের স্ত্রী কমলাবতীর নামে -কমলা সাগর কসবা।(বর্তমানে ত্রিপুরা)
- মহারাজ দ্বিতীয়ত মানিক্যের দীঘি -ধর্মসাগর কসবা।
- মহারাজ গোবিন্দ মানিক্যের স্ত্রী -গুনবতী মহাদেব্যার নামে -গুনসাগর, জাজিয়ারা,কসবা।
- মহারাজ রামদেব মানিক্যের নামে রামসাগর,মাইজখার,কসবা।
- আরো আছে পদ্মদিঘী (বাউরখন্ড),রাজার দিঘী(মূলগ্রাম),শ্রী দীঘি (শ্রীপুর),কৈলাস দীঘি, আন্ধাদীঘি (খেওড়া),পদ্মা পুকুর (বল্লভপুর গ্রামের পূর্ব পাশে), জুগি পুকুর(বল্লভপুর)
শিক্ষা
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এখানকার শিক্ষার হার ৫০.৭% এবং সাক্ষরতার হার ৭৫%। এখানে রয়েছেঃ
- প্রাথমিক বিদ্যালয় - ২১৪টি;
- মহাবিদ্যালয় - ৮টি;
- উচ্চ বিদ্যালয় - ৩৯টি;
- জুনিয়র বিদ্যালয় - ২টি;
- মাদ্রাসা - ২৩টি।
স্বাস্থ্য
স্বাস্থ্য সেবাদানের জন্য রয়েছেঃ
- উপজেলা স্থাস্থ্য কেন্দ্র - ১টি;
- জন্ম নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র - ৫টি;
- কমিউনিটি ক্লিনিক - ২টি;
- স্যাটেলাইট ক্লিনিক - ৬৪টি;
- পশু চিকিৎসা কেন্দ্র - ১টি;
- দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র -? টি;
- কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র - ১টি।
কৃষি
এখানকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষক।
- প্রধান ফসলঃ ধান, গম, বিভিন্ন ধরনের সব্জী।
- লুপ্ত বা লুপ্ত প্রায় শষ্যাদিঃ কাউন, আউস ও আমন ধান, পাট ও অড়হর ডাল।
- প্রধান ফলঃ কলা, কাঁঠাল, আম, জাম।
অর্থনীতি
- কুটির শিল্প - মৃৎ শিল্প, সূচী-শিল্প।
- রপ্তানী পণ্য - শাক-সব্জী।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
- সড়ক পথঃ ১০৫ কিলোমিটার;
- নৌ- পথঃ? নটিক্যাল মাইল;
- রেল পথঃ ১৮কিলোমিটার।
কৃতি ব্যক্তিত্ব
- আনিসুল হক –– রাজনীতিবিদ এবং আইন মন্ত্রী।
- আনোয়ার হোসেন –– বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- আবু সালেক –– বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- মোহাম্মদ হোসেন খসরু –– উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী।
- সামসুল হক –– বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- সিরাজুল হক –– আইনবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং রাজনীতিবিদ।[৩]
- সৈয়দ আব্দুল হাদী –– জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী।
নদ-নদী
- সালদা নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বুড়ি নদীতে পতিত হয়েছে।
- বিজনা নদৗ
হাট-বাজার ও মেলা
- কুটি বাজার, কসবা বাজার, নয়নপুর বাজার,ব্রাহ্মনগ্রাম মজলিশপুর বাজার , সালদানদী বাজার, মন্দবাগ বাজার, গোপীনাথপুর বাজার, চন্ডীদ্বার বাজার।
- চারগাছ বাজার‚চারগাছ মেলা‚মেহারী বাজার‚মেহারী বৈশাখী মেলা‚বাদৈর বাজার ও বল্লভপুর কডুর মেলা।
- বালিয়াহুড়া বাজার, অষ্টজঙ্গল বাজার, কোল্লাপাথর-সাগরতলা বাজার।
- অনন্তপুর বাজার, মাদলা বাজার, বায়েক চৌমুহনী বাজার, কায়েমপুর বাজার, মঈনপুর বাজার , কালতা বাজার, শাহপুর বাজার,জয়নগর বাজার,রাজনগর বাজার,ধজনাগর বাজার,বড়ঠোটা বাজার,রামপুর বাজার,বড়মুড়া পাখি মার্কেট বাজার,গোসাইস্হল মেলা,রামপুরের মেলা,বাড়াই বাজার,মধুপুর বাজার,
এনজিও
ব্র্যাক, আশা, গ্রামীন ব্যাংক, সিদীপ,সাজেদা ফাউন্ডেশন‚ মোখলেছুর রহমান ফাউন্ডেশন এনজিওদের মধ্যে অন্যতম।
জনপ্রতিনিধি
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৪] | সংসদ সদস্য[৫][৬][৭][৮][৯] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
২৪৬ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ | আখাউড়া উপজেলা এবং কসবা উপজেলা | আনিসুল হক | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- ↑ "এক নজরে কসবা"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। জুন ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "3739 - কসবা উপজেলা-NULL"। kasba.brahmanbaria.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-১৮।
- ↑ "প্রখ্যাত আইনজ্ঞ সিরাজুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত - শেষ পাতা - The Daily Ittefaq"।
- ↑ "Election Commission Bangladesh - Home page"। www.ecs.org.bd।
- ↑ "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)। ecs.gov.bd। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"। বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"। প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "জয় পেলেন যারা"। দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।