বিষয়বস্তুতে চলুন

সংবিধান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এরিস্টোটল কর্তৃক সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন

সংবিধান বা গঠনতন্ত্র[] হল কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা বা সংগঠনের সেই সকল মৌলিক বিধানাবলী যা ওই রাষ্ট্রব্যবস্থা বা সংগঠনটির পরিচালন নীতি ও আইনি ভিত্তি গঠন করে। সংবিধান বা গঠনতন্ত্র সাধারণত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা বা সংগঠনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দলিল হয়ে থাকে।[] কোন দেশের ক্ষেত্রে এই শব্দ সেই দেশের জাতীয় সংবিধানকে বোঝায়, যা রাজনৈতিক মৌলিক নিয়ম ও সরকারের পরিকাঠামো, পদ্ধতি, ক্ষমতা ও কর্তব্যকে প্রতিস্থাপিত করে। সংবিধান দুই ধরনের হতে পারে এক, লিখিত দুই, অলিখিত৷

অলিখিত সংবিধানঃ যেই সংবিধনের কিছু অংশ লিখিত, কিছু অংশ প্রথা দ্বারা প্রচলিত এবং যা একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা পাশ হয় না তাকে অলিখিত সংবিধান বলে।

যেমন-গ্ৰেট ব্রিটেনের সংবিধান,সৌদি আরবের সংবিধান,বাংলাদেশের সংবিধান,ভারতের সংবিধান,মিশরের সংবিধান,পাকিস্তানের সংবিধান,প্যালেস্টাইনের সংবিধান,ব্রাজিলের সংবিধান,আর্জেন্টিনার সংবিধান,ইসরাইলের সংবিধান,লেবাননের সংবিধান,ইরানের সংবিধান,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান,জাপানের সংবিধান,চীনের সংবিধান,সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবিধান

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

প্রাচীন সংবিধান

[সম্পাদনা]

২৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লাগাশের সুমেরীয় রাজা উরুকাগিনা দ্বারা জারি করা প্রাচীনতম সংবিধানের প্রমাণ পাওয়া যায় ইরাকে খননকালে।এই নথিটি বিধবা এবং এতিমদের কর থেকে মুক্তি দিয়েছে এবং ধনীদের সুদ থেকে দরিদ্রদের রক্ষা করে।[][][]

হাম্মুরাবির স্টিলের বিবরণ থেকে দেখা যায় যে তিনি সূর্য দেবতার কাছ থেকে ব্যাবিলনের আইন গ্রহণ করেছিলেন।

এর পরে, অনেক সরকার, লিখিত সংবিধান দ্বারা শাসিত হয়। এই ধরনের প্রাচীনতম নথি ২০৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ উর-এর উর-নাম্মুর সংবিধান । []কিছু সুপরিচিত প্রাচীন সংবিধান হল ইসিনের লিপিট-ইশতার সংবিধান, ব্যাবিলোনিয়ার হামুরাবির সংবিধান[], হিট্টাইট সংবিধান, অ্যাসিরিয়ান সংবিধান এবং মোজাইক আইন।[][]

৬২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, ড্রাকো নামে একজন লেখক এথেন্সের নগর-রাজ্যের মৌখিক আইনগুলিকে সংহিতাবদ্ধ করেছিলেন; এই সংবিধানটি অনেক অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করে (এইভাবে অত্যন্ত কঠোর নিয়মের জন্য আধুনিক শব্দ "ড্রাকোনিয়ান" তৈরি করা হয়েছে)।৫৯৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, এথেন্সের শাসক সোলন নতুন সলোনীয় সংবিধান তৈরি করেন। এটি শ্রমিকদের বোঝা লাঘব করে এবং যে শাসক শ্রেণির সদস্যপদ জন্মের (অভিজাততন্ত্র) পরিবর্তে সম্পদের উপর ভিত্তি করে হতে হবে স্থির করে। ৫০৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ক্লিসথেনিস আবার এথেনীয় সংবিধান সংস্কার করেন।

৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ অ্যারিস্টটল প্রথম সাধারণ আইন এবং সাংবিধানিক আইনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক পার্থক্য তৈরি করেন।

৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমানরা তাদের সংবিধানকে দ্বাদশ টেবিল বলত ।[১০]

ভারতে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে অশোকের এডিক্টগুলি মৌর্য রাজার শাসনের জন্য সাংবিধানিক নীতি প্রতিষ্ঠা করে।[১১] প্রাচীন সাংবিধানিক নীতি মনুর সংবিধান প্রায় হারিয়ে গেছে।

প্রাথমিক মধ্যযুগ

[সম্পাদনা]

প্রাথমিক মধ্যযুগে অনেক জার্মানিক তাদের আইনকে সংহিতাবদ্ধ করে। এই জার্মানিক আইন সংবিধানগুলির মধ্যে প্রথম লেখা হয়েছিল ৪৭১ ইউরিকের ভিসিগোথিক সংবিধান।

৬০৪ সালে জাপানের প্রিন্স শোতোকু কর্তৃক সতেরো-ধারার সংবিধান লেখা হয়। বৌদ্ধ শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত, নথিটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সামাজিক নৈতিকতার উপর বেশি ফোকাস করে।[১২]

নবী হযরত মুহাম্মদ (স) মদিনার সংবিধান,মদিনার সনদ তৈরি করেছিলেন। এটি মুসলিম, ইহুদি এবং পৌত্তলিক এর সমস্ত উল্লেখযোগ্য গোত্র ও পরিবারের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি। মদিনার অভ্যন্তরে আওস (আউস) এবং খাজরাজের গোষ্ঠীর মধ্যে তিক্ত আন্তঃগোত্রীয় লড়াইয়ের অবসান ঘটাতে দলিলটি তৈরি করা হয়েছিল। ইবনে হিশামের মতে এ সনদে ৫৩টি ধারা রয়েছে। উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াটের মতে এই সনদের ধারার সংখ্যা ৪৭টি।[১৩]

1000 সালের পর মধ্যযুগ

[সম্পাদনা]

প্রাভদা ইয়ারোস্লাভা, ১০৫৪ সালে কিয়েভান রাশিয়ার আইন হয়ে উঠে।

ইংল্যান্ডে, হেনরি ১১০০ সালে স্বাধীনতার সনদের ঘোষণা দেন।এটি ইংরেজ ব্যারনি দ্বারা সম্প্রসারিত এবং পরিমার্জিত হয় যখন তারা ১২১৫ সালে রাজা জনকে, ম্যাগনা কার্টা স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিল। ম্যাগনা কার্টার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক নিবন্ধ, "হেবিয়াস কর্পাস" রাজাকে, কাউকে বন্দী করার অধিকার দেওয়া হয়নি।আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বহিরাগত বা নির্বাসিত কাউকে ফাসি দেয়া যেত।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
  1. ইংরেজি 'constitution’ শব্দটিকে বাংলায় 'গঠনতন্ত্র' বা 'সংবিধান' বলা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কন্সটিটিউশনকে বাংলায় গঠনতন্ত্র বলে। ফরহাদ মজহার বলেন, গাঠনিক আইন হিসেবে ইংরেজি 'constitution’ শব্দটির সঠিক অর্থ সকল ক্ষেত্রেই গঠনতন্ত্র হবে কারণ কন্সটিটিউশন হল একটি সংগঠনের গাঠনিক আইন এবং সংবিধান শব্দটিতে 'constitution’ শব্দটির গাঠনিক প্রক্রিয়া ধরা পড়ে না।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. মজহার, ফরহাদ (আগস্ট ২০২৩)। গণঅভ্যুত্থান ও গঠন: বাংলাদেশে গণরাজনৈতিক ধারার বিকাশ প্রসঙ্গে। ঢাকা: রাষ্ট্রচিন্তা। পৃষ্ঠা ১৭৩। আইএসবিএন 978-984-97818-0-6 
  2. The New Oxford American Dictionary, Second Edn., Erin McKean (editor), 2051 pp., 2005, Oxford University Press, আইএসবিএন ০-১৯-৫১৭০৭৭-৬.
  3. "Social Reform in Mesopotamia", Benjamin R. Foster, in Social Justice in the Ancient World, K. Irani and M. Silver eds., 1995, p. 169.
  4. Finegan, Jack (2019). Archaeological History Of The Ancient Middle East. Routledge. p. 46. ISBN 978-0-429-72638-5.
  5. Wilkin, Stanley (জুন ২০১৯)। "Mesopotamian Law Codes: The Human Roots of Moses's Laws"Research Gateডিওআই:10.13140/RG.2.2.34598.78408অবাধে প্রবেশযোগ্য। জুলাই ১৩, ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. Roth, Martha. Law Collections from Mesopotamia and Asia Minor, pp. 13–22.
  7. "Cuneiform law | legal body"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২৬ 
  8. Basim Fuad Musallam (Summer ১৯৬৫)। "Law and Authority in Ancient Mesopotamia" (পিডিএফ)AUB ScholarWorks। জুলাই ১৩, ২০২৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  9. Yaron, Reuven (১৯৮৮)। "The Laws of Eshnunna"Noor Library। জুলাই ১৩, ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  10. Mellor, Ronald (2013). The historians of ancient Rome: an anthology of the major writings. Routledge. ISBN 978-0415527163. OCLC 819515201.
  11. Hiltebeitel, Alf (2011). Dharma: Its Early History in Law, Religion, and Narrative. Oxford University Press, US. pp. 36–37. ISBN 9780195394238. Archived from the original on 2 July 2023. Retrieved 9 September 2018.
  12. W.G. Aston, trans., Nihongi: Chronicles of Japan from the Earliest Times to A.D. 697, 2 vols. in 1 (London: Keagan and Co., 1896), vol. 2, pp. 128–133.
  13. "মদিনা সনদ পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৩